ঢাকা উত্তরায় তুরাগ থানার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কিশোর গ্যাং নেতা বাধন খানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মাদক সাম্রাজ্যে এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত

ঢাকা উত্তরায় তুরাগ থানার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কিশোর গ্যাং নেতা বাধন খানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মাদক সাম্রাজ্যে এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত

উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের অপরাধ জগতের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তি বাধন হাসান ওরফে ‘বাধন খান’ শুধু একটি গ্যাং তৈরি করেই থেমে থাকেননি। তিনি তাঁর সংগঠনকে সমাজে প্রভাবশালী করতে স্থানীয় কিশোরদের সহজ শিকারে পরিণত করেছেন। এই কিশোরদের মূলত মাদকাসক্ত করে তাঁদেরকে তাঁর দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং তাঁদের মাধ্যমে বাধন খানের অপরাধের সাম্রাজ্য আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাধন খান তাঁর গ্যাংয়ের সদস্যদেরকে অস্ত্রশস্ত্র, মোটরসাইকেল ও অর্থের জোগান দেন, যা তাদেরকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

ভূমি দখল নেটওয়ার্ক

বাধন খান উত্তরায় জমি দখল করে বেআইনি দোকানপাট এবং স্থাপনা তৈরি করেন, যেগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিনিয়ত অর্থ সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং জমির মালিকরা বাধ্য হন তাঁর কাছে নিয়মিত চাঁদা দিতে। এভাবেই তিনি আস্তে আস্তে উত্তরার বিভিন্ন এলাকা তার প্রভাবাধীন করে তুলেছেন। তাঁর দখল করা জমিগুলোর বেশিরভাগই জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা কিংবা রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন জমি, যেখানে তাঁকে সাহায্য করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর প্রভাব এতটাই শক্তিশালী যে অনেক সময় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেও তাঁর কাজের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

মাদক ব্যবসার বিস্তার

বাধন খান মাদক ব্যবসার জন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। তিনি শুধুমাত্র উত্তরা নয়, আশপাশের এলাকাগুলোতেও মাদক সরবরাহ করেন। তাঁর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক বিক্রির দায়িত্বে থাকে এবং স্থানীয় যুবসমাজকে মাদকাসক্ত করে তাঁদের জীবন ধ্বংস করছে। বাধন খানের মাদক ব্যবসার আওতায় হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবার মতো বিভিন্ন ক্ষতিকর মাদক রয়েছে, যা দ্রুতই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ সংগ্রহ করছেন। এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, বাধন খানের মাদক ব্যবসার কারণে অনেক কিশোর-তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে এবং তাঁদের পরিবারগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তেল চোরাচালানের সিন্ডিকেট

তেলের বাজারেও বাধন খান তাঁর শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। তেল চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এই সিন্ডিকেটে এলাকার কিছু পরিবহন ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সহযোগিতা রয়েছে। বিভিন্ন ডিপো থেকে তেল চুরি করে তা অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়, এবং স্থানীয় বাজারে এই তেলের চাহিদা থাকায় বাধন খানের আয়ও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরা ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর গ্যাং সদস্যদের পরিচালিত অবৈধ তেলের দোকান দেখা যায়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এক ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে তেল চোরাচালানের কারণে পরিবেশ এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের ত্রাস

বাধন খানের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী কিশোর গ্যাং, যাদের মূল অস্ত্র মোটরসাইকেল, মাদকাসক্তি, এবং এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই কিশোর গ্যাং বাধন খানের কথায় স্থানীয়দের উপর অত্যাচার চালায়, তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে এবং ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করে। এই গ্যাং সদস্যরা সাধারণত প্রতিটি দোকান এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা নেয় এবং এতে ব্যর্থ হলে ব্যবসায়ীদের উপর আক্রমণ চালায়। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে, কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অনেক সময় তাঁদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে ভীত থাকে।

বাধন খানের প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক

বাধন খান শুধু স্থানীয় কিশোরদের ব্যবহারই করেন না, তাঁর প্রভাবশালী নেটওয়ার্কে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও জড়িত রয়েছেন। তিনি বিএনপির স্থানীয় একজন নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, যিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বাধন খানের কার্যক্রমকে সহায়তা করেন। এছাড়া স্থানীয় ভূমিখেকো মামুনুর রশিদ নামে আরেক ব্যক্তি তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী। এদের সহযোগিতায় বাধন খান উত্তরা এলাকায় অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন এবং প্রশাসনিক সহযোগিতাও অনেক ক্ষেত্রে পান বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের আহ্বান ও প্রশাসনের করণীয়

বাধন খানের অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা প্রশাসনের কাছে এই অপরাধীকে আটক করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বাধন খানের বিরুদ্ধে ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা এবং তেল চোরাচালানের মত অপরাধমূলক কাজের যথাযথ তদন্ত এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ অভিযানের প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর বিশ্বাস, যদি বাধন খান ও তাঁর অপরাধমূলক নেটওয়ার্ককে দমন করা যায়, তবে উত্তরায় পুনরায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে এবং যুবসমাজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে।

তার ঠিকানা চণ্ডালভোগ, তুরাগ, উত্তরা ঢাকা ১২৩০, বাধনের ফোন নম্বর 01628352401 বাধন খান চণ্ডালভোগের বিএনপির পাতি নেতা পরিচয়ে রাজউকের ভুমি দখলের মূল হোতা মান্নানের ভাতিজা। বাধনের আর এক গডফাদার ভুমি খেকো মামুনুর রশিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *