গভীর রাতে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর, মালামাল আনল কারা

গভীর রাতে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর, মালামাল আনল কারা

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় ঢোকার একটি ঘটনাকে ঘিরে বেশ রহস্যময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফটকের তালা ভেঙে তারা বাসায় প্রবেশ করে প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং বাসার চারটি কক্ষের আসবাবপত্র তছনছ করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই ঘটনায় বাসা থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায় তারা, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন।

ঘটনার পর এক কর্মকর্তা রমনা থানায় গেলে পুলিশ জানায় যে, এটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযান ছিল। তবে রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক নিশ্চিত করেছেন যে, ডিবি অভিযানে গিয়েছিল, কিন্তু বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করতে রাজি হননি। এই ঘটনার ফলে বাসার নিরাপত্তা ও অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় গভীর রাতে একদল লোক ডিবি পুলিশের পরিচয়ে অভিযান চালানোর ঘটনায় আরও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, ডিবির কোনো দল ওই রাতে সেখানে অভিযানে যায়নি।

বাসার নিরাপত্তাকর্মী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, রাত দুইটার দিকে তিনটি মাইক্রোবাসে ১৫-২০ জন ব্যক্তি বাসার সামনে আসেন। তাদের মধ্যে দুজন থানা-পুলিশের পোশাক পরিহিত ছিলেন এবং কয়েকজনের গায়ে ডিবির জ্যাকেট ছিল, বাকিরা সাদাপোশাকে ছিলেন। পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা বাসার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তাকর্মীরা তালা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে, তারা তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করেন এবং ভেতরের চারটি কক্ষ তছনছ করে মূল্যবান জিনিসপত্র, বিশেষ করে স্বর্ণালংকার নিয়ে যান।

এই ঘটনার পর ডিবির অভিযান সম্পর্কিত সরকারি বিবৃতি এবং বাস্তব ঘটনা নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠে এসেছে, কারণ ডিবি দল সেখানে অভিযানে যায়নি বলে পুলিশ দাবি করছে। ঘটনাটি তদন্তের দাবি করছে এবং এটি সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

গভীর রাতে সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি রীতিমতো একটি রহস্যময় ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাসার দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষ সম্পূর্ণ তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। আলমারিগুলো ভাঙা এবং স্বর্ণালংকার রাখার বাক্সগুলো খালি পাওয়া গেছে।

বাসার নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন জানান, রাত দুইটার দিকে কয়েকজন এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গেট খুলতে বলেন। নিরাপত্তাকর্মীরা সন্দেহ করে গেট না খোলায়, তারা দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর গেটের তালা ভেঙে বাকি লোকজন ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঢুকে তারা প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে এবং গ্রিল কেটে বাসায় প্রবেশ করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তারা বাসার ভেতরে ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানান, ভোরের দিকে অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা একটি কার্টন ও দুটি ব্যাগে জিনিসপত্র ভরে নিয়ে যান। এরপর তারা এলাকার এক নিরাপত্তাকর্মীকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করেন, যাতে তিনি সাক্ষ্য দেন যে, বাসা থেকে কোনো জিনিসপত্র নেওয়া হয়নি। ভয়ে নিরাপত্তাকর্মী প্রতিবাদ করতে পারেননি।

এই ঘটনা গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, কারণ পুলিশের নাম ব্যবহার করে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে এবং ডিবি পুলিশ কোনো অভিযানের কথা অস্বীকার করেছে। ঘটনাটি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আরও জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তার স্ত্রী হাসিনা গাজী আত্মগোপনে আছেন, এবং দুই ছেলে বিদেশে অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে একজন ভারতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশ গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের জন্য বাসায় অভিযান চালিয়েছিল। তবে তাঁকে বাসায় পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, গাজী গ্রুপের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, তারা প্রথমে মনে করেছিলেন বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে এবং সে কারণেই তারা রমনা থানায় যান। রমনা থানার পুলিশ তাদের জানিয়েছিল যে, এটি ডিবির অভিযান ছিল।

এ ঘটনার পর থেকে ডিবি পুলিশের ভূমিকা এবং ঘটনার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ বাসায় ভাঙচুর এবং জিনিসপত্র নেওয়ার খবর রয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর পরিবারের বর্তমান অবস্থা এবং এ ধরনের অভিযান পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল ও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

4o

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *