প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য থাকতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে। যদি ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তাঁদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হতে পারে, তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
১. রাশিয়ার প্রতি নীতি
- কমলা হ্যারিস: ডেমোক্র্যাটিক দল সাধারণত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে থাকে এবং রাশিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাইবার আক্রমণ, এবং অন্যান্য হস্তক্ষেপমূলক কার্যকলাপের জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়। কমলা হ্যারিসও সম্ভবত রাশিয়ার কার্যক্রমের সমালোচক থাকবেন এবং ন্যাটোর সহযোগিতায় রাশিয়াকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবেন।
- ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্প প্রশাসনের সময় রাশিয়ার সঙ্গে কিছুটা উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিলেন। যদি ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হন, তাহলে রাশিয়ার প্রতি আরও নমনীয় নীতি গ্রহণ করতে পারেন।
২. চীনের প্রতি নীতি
- কমলা হ্যারিস: চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে উইঘুর মুসলমানদের নিপীড়ন, হংকং ও তাইওয়ান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বজায় রাখা এবং বাণিজ্য বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। ডেমোক্র্যাটরা চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আরো কড়া ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী।
- ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্পের চীনের প্রতি নীতি অনেকটা অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে ছিল। তাঁর প্রশাসন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিল এবং চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে বাণিজ্যের ওপর চাপ বৃদ্ধি ও চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
৩. ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি মনোভাব
- কমলা হ্যারিস: হ্যারিসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো মজবুত করার চেষ্টা করবে এবং যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগে অবদান রাখবে।
- ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্প ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি সমর্থন কমিয়ে ন্যাটোকে আরো আর্থিক দায়িত্ব ভাগাভাগি করার পক্ষে ছিলেন। ইউরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প মূলত অর্থনৈতিক দায়ভার ভাগাভাগির নীতি অবলম্বন করতে পারেন।
৪. আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সহযোগিতা
- কমলা হ্যারিস: প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান পরমাণু চুক্তি এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে থাকতে পারেন। কমলা হ্যারিসের পররাষ্ট্রনীতি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বজায় রাখার পক্ষে থাকবে।
- ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্প তাঁর আগের প্রশাসনেও প্যারিস চুক্তি ও ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। ভবিষ্যতেও তিনি এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করতে চান এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোতে কম নির্ভরশীল থাকতে পারেন।
এইভাবে, কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বেশ কিছু মৌলিক দিক থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে তাঁদের উভয়েরই লক্ষ্য থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করা ও দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।