বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন অংশের মতো হাড়ের স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে ৩০ বছরের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, এবং ৫০ বছর বয়সে এসে নারীদের মধ্যে মেনোপজ পরবর্তী সময়ের কারণে হাড়ের দুর্বলতা বা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ফলে, জীবনের শুরু থেকেই হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত কিছু পুষ্টিকর খাবার খেলে তা দীর্ঘমেয়াদে হাড়কে মজবুত এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১. দুধ:
দুধ হাড়ের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি থাকে। টেক্সাস ভিত্তিক পুষ্টিবিদ লরেন টুইগের মতে, চর্বি-মুক্ত এক কাপ দুধে ৩০৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২৭৭ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা আমাদের দৈনিক চাহিদার এক বড় অংশ পূরণ করে। দুধে উপস্থিত প্রোটিনও হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং বয়স বাড়ানোর সাথে সাথে হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
২. তফু:
তফুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, আঁশ এবং কিছু পটাসিয়াম, যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। লন্ডন ভিত্তিক পুষ্টিবিদ জোসি পোর্টার বলেন, “এই উপাদানগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।” শক্ত তফুতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৪৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা নরম তফুর তুলনায় বেশি।
৩. সার্ডিন মাছ:
সার্ডিনসহ অন্যান্য সামুদ্রিক ছোট মাছ হাড়ের জন্য একটি চমৎকার ক্যালসিয়াম উৎস। প্রতিদিন দুটি সার্ডিন খেলে আপনি ৯১.৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১.১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি পেতে পারেন, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৪. পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল:
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল যেমন কলা, ফুটি এবং তরমুজ হাড়ের জন্য উপকারী। পোর্টারের মতে, পটাসিয়াম হাড় থেকে ক্যালসিয়ামের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং এভাবে হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। পটাসিয়াম হাড়ের শক্তি সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং অস্থিভঙ্গুর ঝুঁকি কমায়।
৫. সবুজ পাতা ও ক্রুসিফেরাস সবজি:
পালং শাক, ব্রকলি, কপি, মিষ্টি আলু, গাজর এবং অন্যান্য সবুজ পাতা ও ক্রুসিফেরাস সবজিতে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের ফাটার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ভিটামিন কে হাড়ের শক্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৬. অরেঞ্জ (কমলা):
কমলা বা সাইট্রাস ফল হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। কোলাজেন হাড়ের কাঠামো শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী। এছাড়া, ভিটামিন সি হাড়ের টিস্যু পুনর্গঠনেও সহায়ক।
৭. বাদাম:
বাদাম, বিশেষ করে আখরোট এবং কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বাদামে থাকা ভালো ফ্যাট হাড়ের মজবুতিকে আরও শক্তিশালী করে।
৮. সয়াবিন:
সয়াবিন এবং সয়ামিল্কে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সয়াবিনে থাকা আইসোফ্ল্যাভোনস হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। সয়াবিনের এসব পুষ্টি উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৯. হলুদ:
হলুদে থাকা কিউকুমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি হাড়ের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ পুনরুদ্ধার করতে এবং হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত হলুদ খেলে হাড়ের সমস্যাগুলি কমে আসে এবং হাড় মজবুত হয়।
১০. তরমুজ:
তরমুজে থাকা লাইকোপিন এবং ভিটামিন সি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তরমুজের পুষ্টি উপাদান হাড়ের ক্ষতি রোধে কার্যকরী এবং হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ হাড়ের সুস্থতার পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে।
সুস্থ হাড়ের জন্য আরো কিছু প্রয়োজনীয় টিপস:
শুধুমাত্র এই খাদ্যগুলো গ্রহণ করলেই যথেষ্ট নয়, হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও অত্যন্ত জরুরি। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম এবং হালকা ভার উত্তোলন হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়া, প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে সময় কাটানো ভিটামিন ডি গ্রহণে সহায়ক, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
তাই, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সূর্যের আলোতে কিছু সময় কাটানো আপনার হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।