কেন হিজড়া শিশু জন্ম নেয়: একটি বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক বিশ্লেষণ
হিজড়া পরিচিতি:
হিজড়া সম্প্রদায় আমাদের চারপাশে পরিচিত হলেও এদের জীবন, সমস্যা এবং সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে আমরা অনেকেই সঠিকভাবে জানি না। অনেকেই তাঁদের অশোভন আচরণ দেখে ভীত হয়ে এড়িয়ে চলেন। হিজড়ারা মূলত সমাজের স্বাভাবিক জীবনের সুযোগ না পেয়ে নিজেদের জন্য আলাদা একটি সমাজ গড়ে তুলেছে। তাঁদের আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের প্রতি অভিমান থেকে আসে, কারণ সমাজ তাঁদের প্রাথমিকভাবে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হিজড়া শব্দের অর্থ
‘হিজড়া’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘হিজরত’ থেকে, যার অর্থ স্থানান্তর বা পরিবর্তন। ইংরেজিতে তাদের ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বলা হয়। সাধারণত, হিজড়া বলতে এমন একজন মানুষকে বোঝায়, যার শরীর পুরুষের হলেও মনের দিক থেকে নারী, অথবা শরীর নারীর হলেও মনের দিক থেকে পুরুষ। এছাড়াও বিভিন্ন ক্রোমোজোম জটিলতার কারণে বিভিন্ন প্রকার হিজড়া রয়েছে।
হিজড়া কেন হয়?
হিজড়াদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য মূলত ক্রোমোজোম জনিত ত্রুটির কারণে তৈরি হয়। মানুষের দেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, এর মধ্যে একজোড়া ক্রোমোজোম শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে। সাধারণভাবে XX ক্রোমোজোম কন্যা শিশুর এবং XY ক্রোমোজোম পুত্র শিশুর জন্ম দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক বিন্যাস ঘটে, যেমন XXY, XYY, বা XYX এর ফলে হিজড়া শিশুর জন্ম হতে পারে।
হিজড়াদের প্রকারভেদ
বিজ্ঞান অনুসারে, হিজড়া হলো ‘সেক্স ক্রোমোজোমের ত্রুটিপূর্ণ বিন্যাস’ থেকে সৃষ্ট। প্রাকৃতিকভাবে চার ধরনের হিজড়া দেখা যায়, তবে বর্তমানে অপারেশন ও হরমোন পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে হিজড়া বানানোর প্রবণতাও রয়েছে। তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রধানত চারটি প্রকারভেদে ভাগ করা যায়:
শারীরিকভাবে পুরুষ হলেও মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী (অকুয়া)
শারীরিকভাবে নারী হলেও মানসিকভাবে পুরুষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী (জেনানা)
কিছু হিজড়ার উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তারা একইভাবে নারী ও পুরুষের অনুভূতি সম্পন্ন
কারো কোনোটাই থাকেনা। মানে তারা নারীও নয় পুরুষও নয়।
আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা হয় চিন্নি।
ইসলামে হিজড়াযদি কোন হিজরা নারী পুরুষাঙ্গের অধিকারী হয় আর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয় তবে এদের নারী ধরা হয়। ইসলামে হিজড়াদের অস্তিত্ব স্বীকার করা হলেও গোপনাঙ্গের ধরণের ভিত্তিতে হিজড়াদের নারী অথবা পুরুষের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই তাকে পর্দা, নামায, রোযা পালন করতে হবে, এমনকি সে মোতাবেক সম্পদের ভাগ ভাটোয়ারা করে দেয়া হয়েছে। যদিও আমাদের সমাজে হিজড়াদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় যা ইসলাম সম্মত নয়। মুসলিম রাষ্ট্র ইরানে সরকারি উদ্যোগে, অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। হিজড়াদের নিয়ে রাসুল (স) এর হাদীস রয়েছে। একজন হিজড়া পবিত্র ক্বাবাঘরের খাদেম এর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে শোনা যায়।
আশার কথা
হিজড়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মানো কোন শিশুর যদি পরিনত বয়সে যাওয়ার আগে চিকিৎসা করা হয় তাহলে বেশীভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু যখন আসলে বোঝা যায় সে সাধারন আর দশজনের থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরী হয়ে যায়। এছাড়াও জন্মের পর বাড়ন্ত সময়ে শিশুর যখন অস্বাভাবিকতা বা হিজড়ার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়; তাহলে তৎক্ষণাৎ পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি সঠিক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশীভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। সঠিক অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াদের লিঙ্গ সমস্যার সমাধান সম্ভব।