শিশুর সর্দি-কাশি হলে কী করবেন?
শিশুদের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সর্দি-কাশির সমস্যা খুব সাধারণ। বিশেষ করে শীতের শুরুতে, তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনে শিশুদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে এটি আরও বেশি দেখা যায়, কারণ তারা তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের সঙ্গে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ঠান্ডা, সর্দি, কাশি হলো এমন সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরই থেকে জটিল রোগ যেমন নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে মারাত্মক আকার নিতে পারে।
সর্দি-কাশির লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত:
- কাশি
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হালকা জ্বর (সবসময় না-ও থাকতে পারে)
- শ্বাসকষ্ট
শ্বাসকষ্টের মাত্রা বোঝা যায় শিশুর শ্বাসের ধরণ দেখে। মা-বাবা হয়তো লক্ষ্য করেন, বাচ্চা আগে যেমন শ্বাস নিত, এখন তার শ্বাসের পরিবর্তন ঘটেছে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সতর্কতা
সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। তবে অনেক সময় ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়, যা সমস্যার সমাধান না করে আরও জটিল করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত প্রোটোকল অনুসারে, নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা জরুরি। যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ভবিষ্যতে জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে।
রোগ প্রতিরোধে করণীয়
শীতের সময় শিশুর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
- গরম কাপড়: শিশুদের গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। শীত বেশি হলে অতিরিক্ত কাপড় পরাতে হবে, কিন্তু ভেতরে যেন ঘাম না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- বুকের দুধ পান: নবজাতক এবং ছোট শিশুদের জন্য বুকের দুধ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান উপায়। নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়।
- গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করানো এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। এতে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
শিশুর সর্দি-কাশির সঙ্গে নিম্নলিখিত গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত:
- শিশুর খিঁচুনি হওয়া
- শিশুর হঠাৎ অচেতন হয়ে যাওয়া বা নিস্তেজ হওয়া
- খাওয়ার সময় বা খাওয়ার পর বমি করা
- শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া বা শ্বাসের ধরণে পরিবর্তন দেখা দেওয়া (যেমন, শ্বাস নিতে গিয়ে পেট বুকের ভেতর ঢুকে যাওয়া)
পরামর্শ
শিশুর সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা সমস্যার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য উপসর্গ থাকলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে সমস্যা গুরুতর হওয়ার আগেই চিকিৎসা করা যায়। সঠিক পরিচর্যা এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে শিশুর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।