গ্রামের কোনো সবজি ক্ষেতে নয় বরং ডিএসসিসি বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে বা ময়লার ভাগাড়েই এই দৃশ্য চোখে পড়বে।
এখানেই কয়েক একর জায়গাজুড়ে চাষ হয়েছে পুঁই শাক, লাল শাক,কলমি শাক, পাট শাক লাউ, সরিষাসহ নানারকমের শাক-সবজি এবং রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে যে বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তা কোনরকম বাছবিচার না করেই ভ্যানে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এরপর সেগুলি এলাকাভিত্তিক ময়লার কনটেইনার বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেগুলি ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য যেখানে রয়েছে নিশ্চিত, সেখানে সবজি চাষ করা কতটা নিরাপদ এই প্রশ্ন করা হচ্ছে।
এর পূর্বেও ঢাকায় এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাছ চাষ করা হয়েছিল। রাজধানীর শ্যামপুরে ২০১৯ সালে ওয়াসার ‘পাগলা পয়ঃশোধনাগারের’ ষোলটি লেগুনে মাছ চাষ করার খবর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এবার মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডে শাক-সবজির চাষ যা পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
সিটি করপোরেশনকে অর্থ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সিটি করপোরেশন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃক প্রশিক্ষণ কক্ষে গত ২৩ সেপ্টেম্বরে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।
গবেষকদল ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৬টি জেলা হতে নয় ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছিলেন; যার মধ্যে ছিল বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, আলু, লাল শাক, শসা, মটরশুটি, পটল ও বাঁধাকপি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এবং সহযোগী অধ্যাপক মোঃ গোলাম কিবরিয়া গবেষণা করেন সবজিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং এর মাত্রা নিয়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে এসব সবজিগুলোতে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেডসহ বেশ কয়েকটি ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে উচ্চমাত্রায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি লালশাকে পাওয়া গেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন যেসব সবজিতে ভারী ধাতু বা হেভি মেটাল রয়েছে সেইগুলো দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, লালশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মত ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা যেখানে প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ৭০৪.৩২ মাইক্রোগ্রাম।
বেগুনে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে ২৭৫.৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢেঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রোগ্রাম ও টমেটোতে প্রতি কেজিতে ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম।
তাদের গবেষণা অনুযায়ী, ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল ও লালশাকে। লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল, টমেটো ও লালশাকসহ নয় ধরনের সবজিতেই। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছের বেগুন, ঢেঁড়শ, টমেটো ও লালশাকে।