প্রবাসীদের জন্য ফি বাড়ানোর চাপ আরও বেড়েছে। কোনো পূর্ব ঘোষণা বা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ছাড়াই সম্প্রতি প্রবাসে কনস্যুলার সেবাসহ বিভিন্ন ফি অতিরিক্তভাবে বাড়ানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই ফি তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। ইতিমধ্যে, বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং কনস্যুলেটে নতুন ফি কার্যকর করা হয়েছে, যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি হলেও, তাদের প্রতি সরকারী মনোভাবের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসীরা সব সময় ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসেবে প্রশংসিত হলেও, বাস্তবে তারা দেশে এবং প্রবাসে প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি পরিপত্রে পুলিশের ক্লিয়ারেন্স, দ্বৈত নাগরিকত্ব, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ, স্থায়ী আবাসিক সুবিধা, দত্তক সনদসহ বিভিন্ন সেবার ফি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ফি তিন গুণ বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা ২০১১ সালের ১৫ মার্চের পরিপত্রে ছিল ৫০০ টাকা। এছাড়া, দ্বৈত নাগরিকত্বের ফি ৫,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ টাকা করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ ফি ৪,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া, নাগরিকত্ব পরিত্যাগের ফি ৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে ২০,০০০ টাকা করা হয়েছে, স্থায়ী আবাসিক অধিকার ফি ৭,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫,০০০ টাকা এবং দত্তক সনদের ফি ১,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
২০১২ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, যারা ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের শিল্প বা ব্যবসায় অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্য ভিসা প্রয়োজন ছিল না। তবে, এখন নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর) ভিসা প্রার্থীদের ৮০ ডলার ফি পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা জানান, তারা ৫ ডিসেম্বর পরিপত্র হাতে পেয়েছেন এবং ৯ ডিসেম্বর থেকে নতুন ফি কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, “এনভিআর ফি ডলারে নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অন্যান্য কিছু সেবা টাকায় উল্লেখ থাকায় সমস্যা হচ্ছে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
নতুন ফি কার্যকর হওয়ায় সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ বিরাজ করছে। নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে সেবা নিতে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, তিনি মেয়ের আমেরিকান পাসপোর্টের জন্য নো ভিসা ফি পরিশোধ করতে এসেছিলেন, কিন্তু ফি বাড়ানোর পর তাকে অতিরিক্ত ৩০ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, “৫০ ডলারের ফি ৬০ ডলার হতে পারে, কিন্তু ৮০ ডলার করা হয়েছে, যা প্রবাসীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা।”
এনভিআরসহ অন্যান্য ফি বাড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা, অথচ তারা যখন কোনো সেবা নিতে যান, তখন তাদের বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয়।”
এর আগে ৪ ডিসেম্বর ঠিকানায় প্রকাশিত “প্রবাসী হলেই বৈষম্য” শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, কিন্তু সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা সবসময় অবহেলিত। দেশে বা প্রবাসে যেখানেই সেবা নিতে যান, তাদের সাধারণ নাগরিকদের তুলনায় বেশি অর্থ গুণতে হয়।
ঢাকার উত্তরা-১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রবাসীদের জন্য একটি কোটা রাখা হয়েছে, কিন্তু প্রবাসী হয়েও আবেদন করার জন্য তাদেরকে অতিরিক্ত আড়াই লাখ টাকা ফি দিতে হবে। অন্যান্য খরচও প্রবাসীদের জন্য বেশি প্রযোজ্য।
সুত্রঃ ঠিকানা