যুক্তরাষ্ট্রের কেনেসো শহরে প্রতিটি পরিবারে অস্ত্র রাখা বাধ্যতামূলক

 

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কেনেসো শহর ছোট হলেও একটি অদ্ভুত এবং ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। ১৯৮০ সালে প্রণীত এক আইনের মাধ্যমে শহরের প্রতিটি পরিবারের প্রধানকে বন্দুক এবং গোলাবারুদ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।

আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “শহরের নিরাপত্তা এবং বাসিন্দাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য, শহরের সীমানার মধ্যে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারের প্রধানের জন্য একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ রাখা বাধ্যতামূলক।”

তবে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি, কিংবা অতীতের অপরাধের রেকর্ড থাকলে এই আইনের আওতায় অব্যাহতি পাওয়া যায়।

শহরের মেয়র ডেরেক ইস্টারলিং জানিয়েছেন, এই আইনটি একটি বাস্তব ও কার্যকরী পদক্ষেপ। তবে, আইনটির বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা শাস্তি দেওয়া হয়নি।

কেনেসো শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দা মনে করেন, এই আইনটি তাদের শহরকে নিরাপদ রাখছে। স্থানীয় একটি পিৎজা পার্লারের গ্রাহক জানান, “অপরাধীরা ভয় পাবে, কারণ তারা জানে না আপনার কাছে কী অস্ত্র আছে।”

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কেনেসো শহরে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটেনি, তবে বন্দুক-সংক্রান্ত দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় গির্জার কর্মী ব্লেক ওয়েদারবি মনে করেন, শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মূল কারণ বন্দুকধারীদের মানসিকতা, না যে শুধু বন্দুক। তিনি বলেন, “বন্দুক, চামচ বা জুতা—যেকোনো কিছু দিয়েই আমরা নিজেদের এবং প্রতিবেশীদের রক্ষা করি।”

শহরের অস্ত্র রাখার আইনটি ১৯৮২ সালে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের মর্টন গ্রোভ শহরে বন্দুক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে প্রণীত হয়। সেই সময়ের কাউন্সিল সদস্য প্যাট ফেরিস জানিয়েছেন, এই আইন মূলত একটি রাজনৈতিক বিবৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল।

কেনেসো শহরে বন্দুক সংস্কৃতি এখন একটি গভীর শেকড় গেড়ে বসেছে। শহরের ডিয়ারক্রিক গান শপে অ্যান্টিক রাইফেল থেকে শুরু করে আধুনিক এবং সাধারণ সব ধরনের বন্দুক পাওয়া যায়। শপের মালিক জেমস রাবুন বলেন, “বন্দুক শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, অনেকেই এগুলো শিল্পকর্ম হিসেবে সংগ্রহ করেন।”

তবে, শহরের সবাই এই আইনটি সমর্থন করেন না। বর্তমান কাউন্সিল সদস্য ম্যাডেলিন ওরোচেনা আইনের প্রতি একটু খোঁচা দিয়ে বলেন, “এটি এমন একটি তথ্য, যা অনেকেই লজ্জার সঙ্গে এড়িয়ে যেতে চান।”

স্থানীয় বাসিন্দা ক্রিস ওয়েলশ, একজন মা এবং শিকারি, বলেন, “এই আইন শুনলে আমি বিব্রত হই।” তিনি চান, শহরের মানুষ বন্দুক আইন নিয়ে নয়, বরং শহরের উন্নত পার্ক, স্কুল এবং সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে গর্ব করুক।

ঠিকানা/এনআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *