ভিটামিন বি-১২: শোষণের প্রক্রিয়া এবং শরীরে প্রয়োজনীয়তা

 

ভিটামিন বি-১২ রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন, ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং স্নায়বিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ভিটামিন বি-১২ এর শোষণ নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা, পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর শোষণ বাড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমের উন্নতি এবং মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়।

ভিটামিন বি-১২ পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং এর শোষণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সাধারণত, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে ভিটামিন বি-১২ থাকে। পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং এনজাইম পেপসিন হজম প্রক্রিয়ায় ভিটামিন বি-১২ কে মুক্ত করে। মুক্ত হওয়ার পর এটি একটি প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি যৌগ তৈরি করে, যা ভিটামিন বি-১২ কে পরিপাকতন্ত্রে সুরক্ষিত রাখে। এই যৌগটি ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ অংশ ইলিয়ামে গিয়ে শোষিত হয়। যদি এই ধাপগুলোতে কোনো সমস্যা হয়, তবে ভিটামিন বি-১২ শোষণে বাধা সৃষ্টি হয়।

ভিটামিন বি-১২ এর শোষণে পাকস্থলীর অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাইপোক্লোরাইড্রিয়া (পাকস্থলীর অ্যাসিডের কম পরিমাণ) ভিটামিন বি-১২ শোষণকে বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষভাবে বয়স্ক এবং অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবনকারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। খাবার খাওয়ার আগে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পানি পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন উদ্দীপিত হয় এবং ভিটামিন বি-১২ শোষণ সহজ হয়।

ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার

  • মাংস
  • কলিজা
  • মাছ (বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ)
  • দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার (পনির, টক দই ইত্যাদি)
  • ডিম (বিশেষ করে ডিমের কুসুম)

নিরামিষাশীদের জন্য ভিটামিন বি-১২ এর উৎস

নিরামিষাশীদের জন্য সিরিয়াল, ইস্ট, এবং উদ্ভিজ্জ দুধ (সয়া মিল্ক, আমন্ড মিল্ক, নারকেল মিল্ক) ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস হতে পারে। এসব খাদ্যকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকবে এবং আপনার শক্তি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া উন্নত হবে।

ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবারগুলো ক্যালসিয়াম (দুধজাতীয় খাবার, শাকসবজি), ভিটামিন বি-৯ (সবুজ শাকসবজি, ডাল) এবং ভিটামিন বি-৬ (কলা, মুরগির মাংস, ডিম, আলু) সহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত।

ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতির ঝুঁকি বেশি থাকে ভেজিটেরিয়ান বা ভেগানদের মধ্যে, কারণ মাছ-মাংস হলো এর প্রধান উৎস। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিদেরও এই ভিটামিনের ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি, কারণ তাঁদের পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড নিঃসরণ কম হয়। পেটের চর্বি কমানোর জন্য কিংবা অন্ত্রের কোনো রোগের কারণে যাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাঁদেরও ভিটামিন বি-১২ শোষণ ব্যাহত হয়। দীর্ঘ মেয়াদে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব দেখা দিতে পারে।

কোন রোগ ও অভ্যাসে ভিটামিন বি-১২ শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়

ক্রোনস ডিজিজ, সেলিয়াক ডিজিজ, স্মল ইনটেস্টাইনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ (এসআইবিও) ইত্যাদি রোগ ভিটামিন বি-১২ শোষণকে প্রভাবিত করে। মদ্যপান ও ধূমপানও এই শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।

ভিটামিন বি-১২ এর শোষণ ভালোভাবে হচ্ছে কিনা কীভাবে বুঝবেন

  • শরীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে
  • বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা উন্নত হবে
  • মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে
  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসাড়তা ও কাঁপুনি কমে যাবে
  • চুল, ত্বক ও নখ হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল

সূত্র: ওয়েবএমডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *