পিসিওএস: কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত রোগ, যা সাধারণত প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে দেখা যায়। “পলিসিস্টিক” শব্দটির অর্থ অনেকগুলো সিস্ট। এই রোগে নারীর শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোনগুলো সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে পুরুষ হরমোনের (অ্যান্ড্রোজেন) পরিমাণ বেড়ে যায়।

পিসিওএস কেন হয়?

পিসিওএসের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণ জানা যায়নি, তবে বেশ কিছু কারণ রয়েছে যা এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • পুরুষ যৌন হরমোন (অ্যান্ড্রোজেন) এর উচ্চমাত্রা,
  • জেনেটিক্স বা পারিবারিক ইতিহাস,
  • ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স,
  • ওজন বৃদ্ধি।

 

সাধারণত নারীদের ডিম্বাশয় প্রতি মাসে একটি ডিম্বাণু ছেড়ে থাকে। এই ডিম্বাণু গর্ভধারণের জন্য পরিণত হয় অথবা সাধারণ মাসিক চক্রে নিঃসৃত হয়। তবে অ্যান্ড্রোজেনের অতিরিক্ত পরিমাণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এই সিস্টগুলো ডিম্বাণুর পরিপক্বতা ও নির্গমনকে বাধাগ্রস্ত করে, ফলে ডিম বের হতে পারে না এবং নিয়মিত ঋতুচক্র ব্যাহত হয়। এর ফলে বন্ধ্যত্বও দেখা দিতে পারে।

পিসিওএস সাধারণত ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত ওজন এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

লক্ষণ:

  • অনিয়মিত মাসিক বা মাসিকে অল্প রক্ত যাওয়া,
  • মুখ, স্তন, হাত বা পায়ের পাতায় অনাকাঙ্ক্ষিত লোম,
  • ওজন বাড়ানো,
  • ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে বা ব্রণ হওয়া,
  • চুল পড়া,
  • শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া (যেমন গলা, কুচকি বা স্তনের নিচে),
  • ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা,
  • গর্ভধারণে অক্ষমতা।

রোগ নির্ণয়:

পিসিওএস নির্ণয়ের জন্য কোনো একক পরীক্ষা নেই। রোগীকের ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কখনও কখনও ডিম্বাশয় বা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে কোনো টিউমার থাকলে পিসিওএসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড বড় হলে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হতে পারে, যা পিসিওএস নয়।

পিসিওএস নির্ণয়ের জন্য তিনটি বিষয় পরীক্ষা করা হয়:

  • ডিম্বপাত না হওয়া,
  • উচ্চমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন,
  • ওভারিয়ান সিস্ট (যা আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যায়)।

চিকিৎসা:

পিসিওএসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, সন্তান ধারণের পরিকল্পনা, মাসিক চক্রের সমস্যা, ওজন, রক্তের শর্করা বা চর্বির মাত্রা এবং শরীরে অ্যান্ড্রোজেনের পরিমাণের ওপর। চিকিৎসার পদ্ধতি এসব বিষয় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়।

অধ্যাপক ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগবিশেষজ্ঞ, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *