গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারপ্রক্রিয়ার শঙ্কায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নতুন করে গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ব্রাজিল ভ্রমণরত ইসরায়েলের এক মজুত সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনপন্থী একটি সংগঠনের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্রাজিলের আদালত দেশটির ফেডারেল পুলিশকে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়। অভিযোগ ছিল, গাজায় দায়িত্ব পালনকালে ওই সেনা যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, সেই সেনা দ্রুত ব্রাজিল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এ ঘটনার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের সেনাদের নিরাপত্তার স্বার্থে গণমাধ্যমের প্রচারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কর্নেল ও এর নিচের পদমর্যাদার সেনাদের পরিচয় বা চেহারা প্রকাশ করা যাবে না। এর আগে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা পাইলট ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের জন্য কার্যকর ছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি বলেন, “আমাদের সেনাদের সুরক্ষার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনকারীদের কার্যক্রম থেকে আমাদের সেনাদের রক্ষা করতেই এই ব্যবস্থা।”
শোশানি আরও জানান, সামরিক নিয়ম অনুযায়ী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করাও নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণকারী ইসরায়েলি সেনাদের জন্য আগে থেকেই কড়া নিয়ম ও নির্দেশনা চালু আছে।
গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপ ইসরায়েলের ভেতরে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গত বছর গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। একই সঙ্গে হামাস নেতা মোহাম্মদ দেফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়।
এ ধরনের আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী সেনারা বিদেশ ভ্রমণের সময় আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকেই সামরিক বাহিনী এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাত ও এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইসরায়েল কৌশলগত নানা পরিবর্তন আনছে। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন রয়েছে।