বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ নিয়ে আসছে আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), যেখানে এই বছরের টুর্নামেন্টটির প্রধান স্পন্সর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস “রকেট” এবং ই-ওয়ালেট অ্যাপ “নেক্সাসপে” থাকবে যথাক্রমে “পাওয়ারড বাই” এবং কো-স্পন্সর হিসেবে, যা স্পন্সরশিপের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়েছে। আজ রাজধানী ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপিএল-এর লোগো উন্মোচন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে টুর্নামেন্টের আর্থিক স্পন্সরশিপ মূল্য প্রকাশের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলেও, আগের বছরগুলোর মতোই এটি গোপন রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এই আগের কার্যপ্রণালী অনুসরণে বিসিবির ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বোর্ডও এ বিষয়ে নিরব থাকে। এর আগে যতবারই বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছে, সম্প্রচার স্বত্বের আর্থিক অঙ্ক নিয়ে কখনোই পরিষ্কার কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন যে এবার নতুন বোর্ডের অধীনে হয়তো আর্থিক স্পন্সরশিপ ও সম্প্রচার স্বত্বের টাকার পরিমাণ উন্মোচিত হবে, কিন্তু শেষমেষ তা হয়নি। স্পন্সরশিপ মূল্য নিয়ে বিসিবির গোপনীয়তা বজায় রাখা সাধারণত সমালোচনার মুখে পড়ে, কারণ বিশ্বের অন্যান্য বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেমন আইপিএল, তাদের আর্থিক হিসাব নির্দিষ্ট সময় পরপর জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে। এ কারণে বিপিএল-এ একই রকমের স্বচ্ছতার অভাব অনেক ক্রিকেটপ্রেমী এবং বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্ন তৈরি করে।
সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের দিকে দায়িত্ব দিয়ে মন্তব্য করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এরপর বলেন যে, “এটি একটি বিজনেস সিক্রেট, যথাসময়ে এ বিষয়ে সকলকে জানানো হবে।” এতে বোঝা যায়, টুর্নামেন্টের স্পন্সরশিপ মূল্য নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকও গোপনীয়তা রক্ষা করতে আগ্রহী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এবং ইমপ্রেস-মাত্রা-এর পক্ষ থেকে জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। তারা একসঙ্গে বিপিএল-এর এবারের আসরকে একটি ভিন্নমাত্রার আয়োজন হিসেবে তুলে ধরেন। নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “বিপিএল এইবার তারুণ্যের জন্য একটি বিশেষ আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা এটিকে আরও বেশি স্মরণীয় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে কাজ করছি।”
দর্শকদের জন্য এবার বাড়তি কিছু বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ফাহিম উল্লেখ করেন, “মাঠে খেলা দেখতে আসা থেকে শুরু করে খেলা শেষে নিরাপদে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত প্রতিটি দর্শক যেন একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে যেতে পারে, আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। পুরো পরিবার নিয়ে দর্শকরা মাঠে আসতে পারে এমন ব্যবস্থা রাখা হবে।”
এই বিপিএল-এর ম্যাচগুলো ৩০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলবে ২০২৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের আসরে মোট সাতটি দল অংশ নেবে, যারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, এবং সিলেট—এই তিনটি শহরের বিভিন্ন ভেন্যুতে খেলার মাঠে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শন করবে। আগের দশ আসরের মধ্যে কেবল দুইবারই মাঠে এলইডি বোর্ড ব্যবহারের সুযোগ ছিল, তবে এবার সেই উদ্যোগ আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইমপ্রেস-মাত্রা জানিয়েছে, এবার পেরিমিটার, সাইড স্ক্রিণে উন্নত ব্র্যান্ডিং উপস্থাপন এবং আরও প্রভাবশালী দৃশ্য সৃষ্টির জন্য এলইডি বোর্ডের ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্ত এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য বিপিএল শুধুমাত্র একটি ক্রিকেট আসর নয়, এটি উৎসবের মতো। তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রিয় তারকাদের খেলা দেখার সুযোগ এই টুর্নামেন্টটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আশাবাদী যে, এই আয়োজন শুধু তরুণ প্রজন্মকেই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনকেও আরও উজ্জ্বল করে তুলবে এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে আরো ব্যাপক পরিচিতি এনে দেবে।
এবারের বিপিএল টুর্নামেন্ট, যেখানে দর্শকদের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপস্থাপনা ও চোখ ধাঁধানো আয়োজন থাকছে, তা ক্রীড়া ভক্তদের জন্য নিশ্চিতভাবে একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে।
ছবিঃ বিসিবি