জেনে নিন বয়স ধরে রাখার গোপন রহস্য
মানুষের ২টি অন্মি ইচ্ছা একটা হলো চিরঞ্জীব হওয়া আরেকটা হলো চিরতরুন হওয়া। প্রথমটা সম্ভব নয় সেটা মানুষ একরকম মেনে নিয়েছে। চেষ্টা শুধু একটু বেশী কিছুদিন বেঁচে থাকার। আর যে কদিন মানুষ বাঁচে মানুষের আকাঙখা থাকে বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে যুবা হয়ে বেঁচে থাকা। যৌবন ধরে রাখার চেষ্টার অন্ত নেই মানুষের।
এখন প্রশ্ন হলো যৌবন কি ধরে রাখা যায়। তারুন্য ধরে রাখার জিনিস। বয়সের সাথে সাথে আমাদের অবশ্যই কিছু পরিবর্তন হয়। কিছু বাহ্যিক কিছু আভ্যন্তরীণ। বাইরের দিকে হলো ত্বক, চুলি, শক্তি, চলাচল, আচরণ, স্বাস্থ্য এসব দিয়ে তারুন্য বিচার করা যায়। আর ভেতরের দিকে হলো সুস্থ্যতা, যৌবনের প্রাণচাঞ্চল্য, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, আপডেট থাকা এসব বিষয়ের উপর হয়তো তিনি কতো তরুন তা ধারণা করা যায়। যে বিষয়গুলোর উপর ধারণা করা হয় সেগুলো যদি নিয়ন্ত্রন করা যায় তাহলে তারুন্য ধরে রাখা যাবে। তাই না?
পুষ্টিকর ও সুষম খাবার
সুস্থ আর সুন্দর থাকতে খাবারের ভূমিকা অনেক৷ মানুষের শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, শর্করা, মিনারেল – এগুলির দরকার৷ সব কিছুই খাওয়া উচিত, তবে একটা পরিমিতিবোধ থাকতে হবে৷ প্রচুর শাক-সবজি, ফল-মূল খাবার তালিকায় থাকা প্রয়োজন৷ মুখ হচ্ছে শরীরের আয়না৷ অর্থাৎ শরীরের ভেতরটা ভালো থাকলে চোখে-মুখে তার প্রভাব তো পড়বেই৷ আগেই পুষ্টিবিদের কাছে জেনে নিতে হবে কোন বয়সে কোন ধরনের খাবার কতটা প্রয়োজন সেভাবে খেতে হবে। ফ্যাট, তেল, ঝাল, মসলা ও মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম
শুধু সুন্দর মুখ আর টানটান ত্বকই তারুণ্যের চাবিকাঠি নয়৷ শরীরটাও থাকতে হবে টানটান আর সেজন্য চাই নিয়মিত কিছুক্ষণ শরীরচর্চা বা ব্যায়াম এবং মুক্ত বাতাস সেবন৷ বয়স বাড়ার সাথে চামড়ার সাথে সাথে শরীরটাকেওতো ফিট রাখা চাই। চকচকে চামড়ার নিচে প্রেসার, এজমা, ডায়বেটিক আর গ্যাস্টিকের গোডাউন বানালেতো হবেনা। তবে এই রোগগুলোর নাম বলছি বিধায় যার এই সব রোগ আছে তিনি হাল ছেড়ে দেবেন না। এইডস এজমা ডায়বেটিককে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষ দিব্যি ভালো আছে। তেমন নজির আপনার আশপাশেই থাকতে পারে।
সবুজে বাঁচুন
সবুজ পরিবেশ ও সবুজ খাবার দাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেস করে ফরমালিন, কীটনাশক ও নানা ক্যামিকেল মেশানো ফল মাছ ও সবজি থেকে দূরে থাকতে হবে। সবুজ খাবার খেতে হবে এবং সেটা হতে হবে অর্গানিক। আর বাসায় কর্ক্ষেত্রে বাড়ীর ছাদে সবুজ গাছ লাগান। দিনে একবার হলেও কিছু সময় সবুজ গাছ দেখুন। মাঝে মধ্যে গ্রামে বা বন জঙ্গলে কিংবা স্বাস্থ্যকর স্থান ভ্রমণ করুন।
পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বত শ্রেনীর নিকটে হানজা প্রদেশের এই মানুষগুলো কেবল অর্গানিক খাবার খায়। এখানে সবজিতে নেই কেমিক্যাল সার, ফলের মধ্যে নেই রাসায়নিক বিষ, মাছের মধ্যে নেই ফরমালিন আর বাড়তি তেল চর্বি খেয়ে ভুড়ি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা নেই। ফলে সেখানে ৬০ বছরের নারীরা সন্তান প্রসব করেন। ৯০ বছরের পুরুষ হন সন্তানের বাবা। ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ৩৫ বছরের তরুনী মনে হবে। ৬০ বছরের পুরুষকে মনে হবে ৩০ বছরের তরতাজা যুবক। ৫০ বছরের কোনো লোককে মনে হতে পারে রুপকথার রাজকুমার। ৬৫ বছরেও অনেকের চুল পাকেনি।বুঝুন সবুজের কি গুন।
অতিরিক্ত রোদ থেকে দূরে থাকুন
চর্ম বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ এতে যে ত্বক সহজে বুড়িয়ে যায় – তা নয়, এর ফলে ত্বকে ক্যানসারও হতে পারে৷ তাছাড়া আজকাল পরিবেশ দূষণও ত্বকে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে৷ তাই যতটা সম্ভব দূষণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং বাইরে থেকে ফিরে গোসল বা ভালো করে হাত-মুখ ধোয়া উচিত৷ যারা আরো নিরাপদ ত্বক চান তারা সানক্রিম ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক প্রসাধনী
বর্তমানে সৌন্দর্য চর্চায় আবার আগের ট্রেন্ড ফিরে এসেছে, অর্থাৎ গাছগাছালির পাতা, রস, শেকড় ইত্যাদির তৈরি ভেষজ ক্রিম, পাউডার, তেল নানা কিছু এসে গেছে বাজারে৷ সৌন্দর্য পিপাসু অনেকেই আজকাল তাই সেদিকেই ঝুঁকছেন। কারণ বাজারের প্রসাধনীতে অনেক ক্যামিকেল থাকে আর সরাসরি লেবু, তরমুজ, পেপেতে সেরকম কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই।
সময়ের সাথে চলা
বয়স যতই হোক না কেন সময়ের সাথে কিছুটা তাল মিলিয়ে চলা বেশ প্রয়োজন৷ তবেই তো সমাজে সব বয়সিদের সাথে মিলেমিশে, একসঙ্গে চলা সম্ভব৷ নিজেকে তরুণ ভাবা এবং সব বিষয়ে আপডেট থাকা অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা বড় ব্যাপার৷ তরুনেদের সাথে মিশুন তাদের সাথে হাসুন। তাদের পছন্দ ও রুচিকে গুরুত্ব দিন। উদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন। আপনার সম বয়সীরা বুড়ো হবে আর আপনি হবেন তরুনদের একজন।আর শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্য বছরে অন্তত একবার ‘মেডিকেল চেকআপ’ করিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত দরকারি৷
হাসুন এবং হাসি খুশি থাকুন
হাসিখুশি থাকাটা জরূরী। যেকোনো সমস্যা হাসিমুখে মোকাবেলা করা। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা। আনন্দ বিনোদন কৌতুক ও খেলাধুলার মধ্যে থাকা এসব আপনাকে তরুন বানিয়ে রাখবে। অন্যরা আপনার তারুন্য টের পাবে শুধু তা নয় বরং আপনিও অনুভব করবেন যে, আপনার বয়স এখনো যথেষ্ঠ কম।
পজিটিভ চিন্তা করুন হতাশা এড়িয়ে চলুন
ইতিবাচক চিন্তা আপনার শরীর মন দুটোই ভালো রাখবে। শুধুযে যুবক রাখবে তা নয় আপনার পরমায়ুও বাড়াবে। ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস করুন। আপনার চারপাশ আপনার কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠবে তখন বেঁচে থাকাটা মনে হবে অর্থপূর্ণ আর একই কারণে নিজেকে মনে হবে যুবক। মনে হবে এখনো আপনার এমন কি বয়স হয়েছে। আপনারতো এখনো অনেক কাজ করার এবং অনেক কিছু দেখার বাকী আছে। মনে রাখবেন এরকম অনুভূতি অনেকের হতে পারে কিন্তু যার মনের সাথে শরীরের মিল থাকবে তিনিই যৌবন ধরে রাখতে পেরেছেন বলে মনে হবে।
বদ-অভ্যাস ত্যাগ করুন সু- অভ্যাস গড়ে তুলুন
রাত করে বাসায় ফেরা, গভীর রাতে জেগে থাকা, সকালের খাবার দুপুরে খাওয়া, খালিপেটে আজে বাজে খাবার খাওয়া, মদ গেলা, চুরুটের ধোঁয়ায় সুখটান দেয়া, মুখরোচক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, বিরানী, গোমাংশ, হাস ইলিশের লোভ চাড়তে না পারা, এব ব্লেড দিয়ে অনেকবার সেভ করা, সঠিক শ্যাম্পু বাছাই না করা, পরিচ্ছন্ন না থাকা ও হুটহাট ঔষধ খেয়ে নাভী গরম করা এসব সমস্যা যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে কিসের আবার যৌবন ধরে রাখা আপনি সমবয়সীদের আগেই বুড়িয়ে যাবেন।
তাই যথেষ্ট ঘুমান, অপ্রয়োজনীয় স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন৷ অ্যালকোহল, ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দিন আর দিনে অন্তত একবার প্রাণ খুলে হাসুন৷ ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন৷ প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক রাখুন, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পারলে অন্যের উপকার করার চেষ্টা করুন৷ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে থাকুন। ভ্রমণ করুন, বাগান করুন, শখের বশে কবুতর বা খরগোশ পালুন। প্রাণবন্ত থাকুন আর মুক্ত মনে বিচরণ করুন। সবার সাথে মিলেমিশে চলুন। গরীবদের দান করুন। কারো সাথে শত্রুতা করা থেকে বিরত থাকুন সকলে সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করুন। আপনি নিজেই অনুভব করবেন নিজের তারুন্য।
গ্রিন-টি বা সবুজ চা
সৌন্দর্য চর্চা বা তারুণ্য ধরে রাখতে গ্রিন-টি বা সবুজ চায়ের জুড়ি নেই৷ এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট৷ নিয়মিত গ্রিন-টি পান শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ ডাক্তার হাইনরিশ বলেন, ‘‘১২ সপ্তাহ ধরে ৬০ জন মানুষকে প্রতিদিন গ্রিন-টি পান করিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ যাতে বেরিয়ে আসা যে, তাঁদের চামড়া বা ত্বক অনেক টানটান হয়েছে। যদি নিরামিষভোজি হতে পারেন তবে আপনার তরুন হওয়ার সম্ভাবনা আরো অনেক বেড়ে যাবে। তবে বাজারের সব ড্রিংস, কফি, ফাস্টফুড এসব এড়িয়ে চলতেই হবে। মদ ও সিগারেট এর কথাতো বলায় বাহুল্য।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে ও স্বপ্নবাজ