ডিজিটাল যুগে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের জন্য নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। সুইডেনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এরিকসনের সঙ্গে তারা এক যুগান্তকারী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অটোমেশন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত সেবা ও কার্যকরী উদ্ভাবন নিয়ে আসবে।
এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গ্রামীণফোন এবং এরিকসন দেশব্যাপী টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতির জন্য কাজ করবে। এর অধীনে প্রযুক্তিগত পরীক্ষা, গবেষণামূলক কর্মশালা এবং পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালিত হবে। লক্ষ্য থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টকে আরও কার্যকর করা এবং গ্রাহকসেবার মান বাড়ানো।
অংশীদারিত্বটি সম্প্রতি “ইনোভেট এশিয়া ২০২৪” অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দেশের ডিজিটাল খাতের ভবিষ্যৎ রূপকল্প নিয়ে আলোচনা করেন।
গ্রামীণফোনের চিফ ইনফরমেশন অফিসার নিরঞ্জন শ্রীনিবাসন এই অংশীদারিত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশন প্রযুক্তির সাহায্যে টেলকো টেক রূপকল্প বাস্তবায়নে এটি বড় ভূমিকা রাখবে। আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের জন্য উন্নত অভিজ্ঞতা তৈরি করা।”
তিনি আরও বলেন, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ক্রমবর্ধমান চাহিদা আরও দক্ষতার সঙ্গে পূরণ করা সম্ভব হবে। বিশেষত এমন এক সময়ে, যখন গ্রাহকদের চাহিদা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, এই উদ্যোগ টেলিযোগাযোগ খাতের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এরিকসন মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের প্রধান ডেভিড হেগারব্রো এই অংশীদারিত্ব নিয়ে বলেন, “গ্রামীণফোনের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এরিকসনের পুরস্কারপ্রাপ্ত এআই ও অটোমেশন সল্যুশন বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন যুগের সূচনা করবে। এটি কেবলমাত্র নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টকেই সহজ করবে না, বরং এটি গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাও উন্নত করবে।”
এরিকসন এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আরও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগামী দিনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন ভিত্তি স্থাপন করবে।
চুক্তির আওতায় গ্রামীণফোন এবং এরিকসন যৌথভাবে সরকারি সংস্থা, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে টেকসই উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে। এটি কেবলমাত্র টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের সাহায্যে গ্রামীণফোন ও এরিকসন যৌথভাবে এমন একটি প্রযুক্তি-সমাধান তৈরি করতে পারবে, যা দেশের গ্রাহকসেবা এবং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
গ্রামীণফোন ও এরিকসনের এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশন প্রযুক্তির দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে এটি দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে আরও উন্নত, টেকসই এবং গ্রাহকবান্ধব করে তুলবে। এই যুগান্তকারী উদ্যোগ শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারে নয়, দেশের সার্বিক ডিজিটাল উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।