বস্তি থেকে উঠে এসে সিমরানের আইপিএলে ভাগ্য বদল

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম বস্তিগুলির একটি মুম্বাইয়ের ধারাভি। দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে যেখানে বেড়ে ওঠা সিমরান শেখের। তবে এক আইপিএলই ভাগ্য বদলে দিলো তার। বনে গেলেন কোটিপতি।১ কোটি ৯০ লাখ রুপিতে দল পেলেন সিমরান।
ছোট পরিসরে বেঙ্গালুরুতে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৫ উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের (ডব্লিউপিএল) নিলাম।উক্ত নিলামে ১৯টি স্লট পূরণ করতে মোট ১২০ জনের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ছোট এ নিলামে বাজিমাত করেছেন ২২ বছর বয়সি ব্যাটার সিমরান শেখ। মাত্র ১০ লাখ ভিত্তিমূল্যের এ ক্রিকেটারকে ১ কোটি ৯০ লাখ রুপির বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে গুজরাট টাইটান্স।

কিন্তু রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া সিমরানের ভাগ্য বদলের রাস্তাটা সহজ ছিল না। সংগ্রামের এক জীবন পার করে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন তিনি। সিমরানের বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ের বস্তি ধারাভিতে। মানবাধিকার সংস্থা ‘হ্যাবিট ফর হিউমিনিটি’র জরিপ অনুযায়ী জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ঘন বসতি এখানে। যেখানে ৫৫০ একর জায়গাতে একসঙ্গে প্রায় ১০ লাখ লোক বসবাস করছে।

দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছেন সিমরান। মানুষের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও কটু কথাও তাকে দমাতে পারেনি।ইচ্ছাশক্তিকে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। এলাকায় কোনো মেয়ে ক্রিকেট খেলতো না বলে ছেলেদের সঙ্গেই তার খেলার শুরু। সে সময় অবশ্য টেনিস বলে স্ট্রিট ক্রিকেট খেলতেন। নারী হয়েও ছেলেদের সঙ্গে মেশা ও খেলার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাকে। তবুও থামেননি তিনি। একটা সময় যোগ দেন স্থানীয় ইউনাইটেড ক্লাবে। যেখানে রোমদেও নামের একজন কোচের সহযোগিতায় ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করেন। জ্ঞান অর্জন করেন পেশাদার ক্রিকেটের। তাকে সঞ্জয় সাতাম নামের একজন ক্রিকেট কিট ও প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সহায়তা করেছিলেন।

মেধা ও যোগ্যতায় ২০২৩ সালেই তিনি নারী আইপিএলে সুযোগ পেয়ে যান। তাকে ১০ লাখ রুপিতে অভিষেক আসরে দলে ভিড়িয়েছিল ইউপি ওয়ারিয়র্স। ওই আসরে খুব একটা আলো ছড়াতে না পারায় তাকে আবার ছেড়ে দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তবে এবার তাকে দলে ভিড়িয়ে চমকে দিয়েছে গুজরাট টাইটান্স। তাও নিলামে সর্বোচ্চ দাম পেয়েছেন তিনি। সিমরানের বাবাও কল্পনা করতে পারেননি, ক্রিকেট খেলে তার মেয়ে একদিন এমন পর্যায়ে আসবেন।

সিমরানের বাবা জাহিদ আলি বলেন, ‘মেয়ে যখন ছোট ছিল, ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী ছিল। যখনই মাঠে ক্রিকেট খেলতো, অনেকেই তাকে বকাঝকা করতো, নানা কথা বলতো। কিন্তু মেয়ে সবাইকে উপেক্ষা করতো। সে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করে এবং এগিয়ে যেতে থাকে। আমরা গরিব মানুষ এবং সেই সময় আমাদের মেয়েকে সাহায্য করার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সে এগিয়ে যেতে পেরেছে। আমি শুধু বলতে চাই যে আজ আমরা যে সম্মান পাচ্ছি তা আমাদের মেয়ের দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায়। অনেকেই আমাদের সমর্থন করেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *