২৪ বছরের প্রশ্নপত্র ফাঁস: সিআইডির হাতে শনাক্ত ৭টি চক্র

সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাতটি চক্র চিহ্নিত করেছে সিআইডি। বিসিএসসহ নন-ক্যাডারের ৯টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ কার্যক্রম ২০০০ সাল থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।

সিআইডি ইতিমধ্যে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাঁদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চক্রগুলোতে পিএসসির সাবেক সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে পিএসসির এক সাবেক সদস্য ও একজন উপপরিচালকের নাম উঠে এসেছে।

চক্রগুলো শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসেই থেমে থাকেনি; ভাড়া করা বাসায় পরীক্ষার্থীদের উত্তর শেখানোর ব্যবস্থাও করত। ৫ জুলাই রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে পরীক্ষার আগের দিন রাতে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করা হয়।

জবানবন্দিতে উঠে আসা তথ্য

আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চক্রের প্রধানরা হলেন:

  • সৈয়দ আবেদ আলী (পিএসসির সাবেক গাড়িচালক)
  • সাজেদুল ইসলাম (অফিস সহায়ক)
  • খলিলুর রহমান (ডেসপাস রাইডার)
  • সাখাওয়াত হোসেন (ব্যবসায়ী)
  • জাহিদুল ইসলাম (চক্রের প্রধান)

প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য চক্রগুলো বিভিন্ন স্থানে গোপন বুথ স্থাপন করত। পিএসসির একাধিক সদস্যের সাহায্যে বিজি প্রেস ও অন্যান্য জায়গা থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হতো।

পিএসসির অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা

সাজেদুল ইসলাম ও খলিলুর রহমান তাঁদের জবানবন্দিতে পিএসসির এক সদস্য ও একাধিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সাজেদুল জানিয়েছেন, ৪৬তম বিসিএসসহ ভবিষ্যৎ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পরিকল্পনা ছিল।

অর্থ লেনদেন ও বিত্তবৈভব

আবেদ আলী জবানবন্দিতে বলেন, তিনি প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৮-১০ লাখ টাকা নিতেন। সাজেদুলকে তিনি ৭৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জন করেন চক্রের সদস্যরা।

আইনি ব্যবস্থা ও তদন্ত

পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় সিআইডি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

চাকরিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, প্রশ্ন ফাঁস রোধে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। এ ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

কামরুল হত্যাকাণ্ডে দুই কিশোর গ্রেপ্তার হয়েছে হানিফ উড়ালসড়কে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *