ব্রিটিশ এমপিদের ড. ইউনূস সংক্রান্ত সমালোচনামূলক রিপোর্ট বাতিল

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ব্রিটিশ সংসদের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম *দ্য গার্ডিয়ান* জানিয়েছে, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতি পক্ষপাতমূলক অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত নভেম্বরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়। তবে প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা ও তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষজ্ঞরা একে পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুলে ভরা বলে আখ্যা দেন।

প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্য তুলে ধরেছিল। এতে বলা হয়, আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং “কট্টর ইসলামপন্থিদের” পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এমন একটি হতে হবে যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়।”

প্রতিবেদনটির উৎস ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক একটি থিংক-ট্যাংকের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল, যা আরও বিতর্ককে উসকে দেয়। এতে সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সংখ্যক অভিযোগ আনার কথা উল্লেখ করা হয়, যার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি রূপা হক প্রতিবেদনটি নিয়ে কঠোর অবস্থান নেন। তিনি এটিকে “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।” রূপা আরও জানান, ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে এই ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন এবং এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেছেন, “প্রতিবেদনটি মূলত ত্রুটিপূর্ণ। এটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।”

এপিপিজি জানিয়েছে, লেবার পার্টির এক এমপি বিষয়টি নিয়ে হাউস অব কমন্সে অভিযোগ করার পর প্রতিবেদনটি আর বিতরণ করা হচ্ছে না এবং এটি পর্যালোচনার জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। এক মুখপাত্র বলেন, “প্রতিবেদনটি এখন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ নথি হিসেবে পর্যালোচনার অধীনে আছে। এটি আর প্রচার বা বিতরণের জন্য নয়।”

গত বছরের আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। তিন মাস পর, গত নভেম্বরে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কিত এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির একটি পরিকল্পনার অংশ হতে পারে এই প্রতিবেদন। তবে ভুল তথ্য ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে এটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা দেশটির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক তথ্য যাচাই এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *