বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। এখানে জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট) সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে তারা একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করা হয় তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে। এই নির্বাচক মণ্ডলী ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি এই ইলেকটোরাল কলেজ করে থাকে।
নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজের মোট ৫৩৮ টি ভোটসংখ্যা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০ টি ভোট পেতে হবে।
নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্যই নির্ধারিত করা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ৫৫ টি ইলেকটোরাল কলেজ ছিল ৫৫টি। অঙ্গরাজ্যটিতে এবারের নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৪টি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি কংগ্রেসনাল একটি ডিস্ট্রিক্ট কমে গেছে সর্বশেষ আদমশুমারিতে এখানের জনসংখ্যা কমে যাওয়ায়। এর ফলে এ রাজ্যে কমে গেছে ইলেকটোরাল কলেজও। আবার ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে সাউথ ডাকোটা, আলাস্কা, ভারমন্টের মতো অঙ্গরাজ্যে।
কিভাবে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়?
ইলেকটোরাল ভোট কোন অঙ্গরাজ্যে কতটি করে থাকবে, তা নির্ধারিত হয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট কতটি করে রয়েছে তার উপর। দুটি ভোট দুজন সিনেটরের জন্য এবং একটি করে ভোট প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য। এবারের নির্বাচনে ৫২টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ক্যালিফোর্নিয়াতে রয়েছে এবং ২ টি সিনেট আসন রয়েছে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মতোই। এতে মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা অঙ্গরাজ্যটিতে ৫৪টি।
কারা থাকেন ইলেকটোরাল কলেজে
নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি,সিনেটর , গভর্নর বা এমন কেউ ইলেকটোরাল ভোট দেবেন না।
আলাদা একটি ভোটার দলকে এ জন্য একেবারে নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। দুই ধাপে ঠিক হয়ে থাকে এটি।প্রথম ধাপ দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে । তাদের মনোনীত ইলেকটোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয় দুই দলের পক্ষ থেকে সাধারণ নির্বাচনের আগে যাকে স্লেট বলে।
ইলেকটোরাল ভোটারের এই স্লেট নির্বাচন করে প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন সাধারণ নির্বাচনের সময় ভোটাররা।
যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যেই জয়ী হয়, ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে সে দলের স্লেটটিই নির্বাচিত হয়। সরাসরি ভোটে কমলা হ্যারিস আসন্ন নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচিত হলে, নির্বাচিত হবে ডেমোক্রেটিক পার্টির পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটার স্লেটটি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ইলেকটোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন। সাধারণ নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই ইলেকটোরাল ভোটাররা সভায় বসবেন ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের প্রথম সোমবার এবং নিজেদের ভোটটি আলাদা ব্যালটে দেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য। এ ভোট গননার জন্য পরবর্তী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস চেম্বারে সভা অনুষ্ঠিত হবে ।
সে সভায় বিদ্যমান ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোট গণনার পরই জানা যাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল।তবে সাধারণ নির্বাচনের পরপরই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জয়ী প্রার্থীর পরিচয় থেকেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে ধারনা করা যায়। যাঁরা দল ও প্রার্থীর প্রতি বেশি অনুগত, সাধারণত দলগুলোকে এমন ব্যক্তিকেই ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে মনোনীত করে থাকেন।
প্রভাবশালী ছয় অঙ্গরাজ্য
ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নিউইয়র্ক,পেনসিলভানিয়া, ইলিনয়—এই ছয়টি অঙ্গরাজ্যের হাতেই আছে ১৯১টি ইলেকটোরাল কলেজ। ‘উইনার টেক ইট অল’ নীতির কারণে এই ছয় অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একনজরে ইলেকটোরাল ভোট
নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্যই রয়েছে। প্রতিটি
অঙ্গরাজ্যে সংখ্যা নির্ধারন – কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের সংখ্যা + সিনেট ২ আসনের জন্য দুটি ভোট- দুই দলের নির্ধারিত একটি (স্লেট)।
অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী নির্বাচিত হয়, দল নির্ধারিত তার সেই স্লেটটি নির্বাচিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
ইলেকটোরাল কলেজের সভায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার নির্বাচিত ভোটাররা গোপন ব্যালটে ভোট দিবেন। ২০২৫সালের ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট গণনার শেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মোট সংখ্যা—৫৩৮ এবং বিজয়ী হতে প্রয়োজন হয়—২৭০ ভোটের।
আগামীকালই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কে উঠবেন হোয়াইট হাউসে রিপাবলিক পার্টি পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস তাই নিয়েই এখন মূল উত্তেজনা।সেটাই এখন মূল আলোচনার বিষয়।