
শীতকাল আসলেই গরম পানির জন্য গিজারের ব্যবহার বেড়ে যায়। তবে, গিজার ব্যবহারের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে গিজার ব্যবহার করলে আপনি শুধু নিরাপদ থাকতে পারবেন না, এটি কার্যকরী হবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কমবে। নিচে গিজার ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস তুলে ধরা হলো:
১. গিজার বসানোর সঠিক স্থান নির্বাচন
- গিজার কখনোই বদ্ধ বা বন্ধ জায়গায় বসানো উচিত নয়।
- গিজার এমন একটি স্থানে বসানো উচিত যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল থাকে, যেমন বাথরুমে।
- বাথরুমে গিজার বসালে অবশ্যই সেখানে এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন, যা অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং তাপ বাইরে বের করে দিতে সহায়তা করে।
২. এক্সজস্ট ফ্যানের ব্যবহার
- গিজার এবং এক্সজস্ট ফ্যান একসাথে ব্যবহার করা উচিত।
- এক্সজস্ট ফ্যান গিজারের অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা দূর করে, যা গিজারের কার্যকারিতা এবং আয়ু বাড়ায়।
- ফ্যান ব্যবহার করলে গিজারের সুস্থভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি কমে।
৩. গিজারের নিয়মিত সার্ভিসিং
- গিজার ব্যবহারের শুরুতে এবং প্রতিটি শীতকাল শুরুর আগে সার্ভিসিং করানো উচিত।
- গিজারের ভিতরে জমে থাকা ময়লা এবং অন্য উপাদান পরিষ্কার করাতে গিজারের কার্যকারিতা বাড়ে।
- সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে গিজারের লিক বা অন্য কোনো সমস্যা আগেই চিহ্নিত করা যায় এবং সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হয়।
৪. গিজারের সুইচ অন ও অফ করার সঠিক সময়
- গিজারের সুইচ সারাদিন অন রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- গরম পানি প্রয়োজন হলে গিজারের সুইচ কিছুক্ষণ আগে অন করুন, এবং পানি গরম হলে তা দ্রুত বন্ধ করে দিন।
- এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ খরচ কমবে এবং গিজারের আয়ু বাড়বে।
৫. গিজারের সাথে পানি রেখে দেওয়া বিপজ্জনক
- গিজারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী থার্মোস্ট্যাট পানি গরম করার সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- তবে, গিজারটি দীর্ঘ সময় ধরে চালু রাখা হলে তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
- কখনোই গিজারের ভিতরে পানি রেখে গিজার চালু রেখে দিবেন না। এটি গিজারের জন্য ক্ষতিকর এবং আপনার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
৬. গোসলের সময় গিজার বন্ধ রাখুন
- গিজারের সুইচ বন্ধ করার পর কিছু সময় গরম পানি থাকবে, তাই গিজার বন্ধ করে গোসল করুন।
- গিজার চালু রেখে গোসল করলে, পানি অত্যধিক গরম হতে পারে এবং এটি বিদ্যুৎ খরচও বাড়ায়।
- গিজার বন্ধ রেখে গোসল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে বিদ্যুৎ অপচয় কম হয় এবং গিজার দীর্ঘস্থায়ী থাকে।
৭. গিজারে পানি গরম হতে দেরি হলে কী করবেন?
- গিজারের মধ্যে যদি পানি গরম হতে দেরি হয়, তবে বুঝতে হবে গিজারে কোনো সমস্যা রয়েছে।
- গিজারে সমস্যা থাকলে, যেমন থার্মোস্ট্যাট বা গরম করার উপাদান নষ্ট হতে পারে, সেক্ষেত্রে দ্রুত সার্ভিসিং করানো উচিত।
- গিজারের সঠিক সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব এবং গিজার নিরাপদভাবে কাজ করবে।
৮. গিজারের সুইচ অফ করার পরেও সাবধানতা
- গিজার চালু রাখলে পানির তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই গিজারের সুইচ অফ করার পর কিছু সময় অপেক্ষা করুন এবং তারপরই পানি ব্যবহার করুন।
- গিজারের সুইচ অফ করার পর পানি কিছু সময় গরম থাকে, কিন্তু গিজার বন্ধ না করেই গোসল করা বিপজ্জনক হতে পারে।
৯. গিজারের স্থায়িত্ব বাড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- গিজার ব্যবহারের সময় কখনোই অপ্রয়োজনীয় ভাবে চালু রাখবেন না।
- সার্বিকভাবে গিজারের সুইচ অফ করা এবং এক্সজস্ট ফ্যান চালানো গিজারের আয়ু বাড়াতে সহায়ক।
- গিজারের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বা শব্দের ক্ষেত্রে দ্রুত সার্ভিসিং করানো উচিত।
গিজার হলো শীতকালে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস, তবে এর সঠিক ব্যবহার না করলে এটি শুধু আপনার বিদ্যুৎ খরচ বাড়াবে না, গিজারের আয়ু কমিয়ে দেবে। গিজারের নিরাপদ এবং কার্যকরী ব্যবহারের জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চললে আপনি নিশ্চিতভাবে এর দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন। নিয়মিত সার্ভিসিং, সুইচ অন এবং অফ করার সঠিক সময়, এবং পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্কতা গিজারের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। শীতকালে গিজারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি শুধু নিরাপদ থাকবেন না, বিদ্যুৎ খরচও কমাতে পারবেন।