ঢাকার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায় ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনায় জড়িত তিনজন প্রথমে দাবি করেছিলেন যে, কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেই তাঁরা এই অপরাধে জড়ান। তবে, পুলিশি তদন্তে এই দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল অর্থ সংগ্রহ করে আইফোন কেনা। মানুষের সহানুভূতি পেতে এবং নিজেদের কার্যক্রম আড়াল করতে তাঁরা কিডনি রোগীর গল্প সাজিয়েছিলেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরব এবং তাঁর দুই সহযোগীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিডনি রোগের গল্প ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। লিয়ন মোল্লাকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামীকাল আদালতে হাজির করা হবে। অন্যদিকে, বাকি দুই কিশোর ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাঁদের গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার চুনকুটিয়ার পাকাপুল এলাকার রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় তিনজন ব্যক্তি ঢুকে খেলনা পিস্তল দিয়ে ১০ জন কর্মকর্তা এবং ৬ জন গ্রাহককে জিম্মি করে। ডাকাতরা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যাগে এবং তিন লাখ টাকা নিজেদের পকেটে রাখে। পরে পুলিশ তাঁদের আটক করে।
ডাকাত দলের নেতা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা লিয়ন মোল্লা (২২), পেশায় একজন গাড়িচালক। তাঁর সঙ্গী ছিল কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকার দুই কিশোর। এক সপ্তাহ ধরে ব্যাংক এবং আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণের পর তাঁরা এই ঘটনা ঘটান। ডাকাতির সময় ব্যবহারের জন্য লিয়ন কালীগঞ্জ বাজার থেকে খেলনা পিস্তল এবং চাকু কিনেছিলেন।
রিমান্ডে লিয়ন মোল্লা স্বীকার করেছেন, তাঁদের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল আইফোন কেনা। লিয়ন দুই কিশোরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ডাকাতি সফল হলে তাঁদের জন্য আইফোন কিনে দেওয়া হবে। তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল এলাকার একটি খেলার মাঠে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা এক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, লিয়ন মোল্লা আগে থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি কয়েকটি ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা মানবিক আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তবে, পুলিশের তৎপরতায় তাঁদের গল্প উন্মোচিত হয়।