শীতে খেজুরের রস: সতর্ক না হলে মারাত্মক বিপদ

শীতে খেজুরের রস: সতর্ক না হলে মারাত্মক বিপদ

শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন বাড়ে। পিঠাপুলি তৈরিতেও খেজুরের রসের ব্যবহার দেখা যায়। তবে কাঁচা খেজুরের রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এই ভাইরাসের কারণে প্রাণঘাতী মস্তিষ্কের প্রদাহ পর্যন্ত হতে পারে। তাই কাঁচা রস পান করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে হাঁড়ি বেঁধে রাখা হয়। অনেক সময় বাদুড় হাঁড়ির রসে মুখ দেয়, যার ফলে তাদের লালার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস রসে প্রবেশ করে। দূষিত রস পান করলে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের জুনোটিক ভাইরাস, যা বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এটি ছড়াতে পারে। এ ভাইরাস সাধারণ জ্বর থেকে শুরু করে প্রাণঘাতী মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হলে প্রাথমিকভাবে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, গলাব্যথা বা বমির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অচেতনতা বা খিঁচুনির মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি কাঁচা খেজুরের রস পান করার ইতিহাস থাকলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে কাঁচা রস কখনোই পান করা উচিত নয়। রস ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে হবে। উচ্চ তাপে রস জ্বাল দিলে ভাইরাস মরে যায়।
রস থেকে গুড় তৈরি করলে ভাইরাসের ঝুঁকি থাকে না, তাই খেজুরের গুড় খাওয়া নিরাপদ।

গ্রামাঞ্চলে রস সংগ্রহের হাঁড়ি ঢেকে রাখার জন্য ধইঞ্চা, পাট, বাঁশের চিক বা পলিথিন ব্যবহার করা হয়। তবে তাও যথেষ্ট নয়। খাওয়ার আগে রস জ্বাল দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, আধ-খাওয়া বা দূষিত ফল এড়িয়ে চলা উচিত। গাছ থেকে পেড়ে আনা ফল ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। শিশুদেরও এ অভ্যাস শেখানো প্রয়োজন।

গ্রামাঞ্চলে যেখানে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন বেশি, সেখানে শীতকালে নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। জ্বরের সঙ্গে অচেতনতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রোগীর কাছাকাছি থাকা সেবাদানকারী বা চিকিৎসকদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। রোগীর সেবা দেওয়ার পর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। রোগীর চারপাশে ভিড় এড়ানোও জরুরি।

এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই সচেতনতাই একমাত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। কাঁচা রস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। এ বিষয়ে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন।

নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং সতর্ক থাকুন। নিরাপদ খাদ্যাভ্যাসই আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *