গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য দৃশ্যপট, যেখানে হাজারো মানুষ একসঙ্গে বসে খাচ্ছেন—ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলমান একত্রিত হয়ে একসাথে খাচ্ছেন। মৌলভীবাজার জেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের রাঘাটি শিরনি আয়োজন হয়ে গেল, যা এখন গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ আয়োজন শুধুমাত্র একটি ভোজের অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি ছিল সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং সাম্যের এক অদ্ভুত উদযাপন।
প্রথম আলোর সূত্রমতে, গত রোববার ভুজবল কপালিবাড়ির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই শিরনি আয়োজনটি সবার জন্য ছিল উন্মুক্ত। এখানকার বিশেষত্ব ছিল, এতে কোনো দাওয়াত দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র স্থানীয় মসজিদের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে, একে অপরকে পরিচিতি বা আমন্ত্রণের কোন প্রয়োজন ছিল না। মাঠে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কিংবা নাড়ার উপর বসে খাবারের আয়োজন চলছিল, এবং প্রতিটি মানুষ একসঙ্গে আনন্দে খাচ্ছিলেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজন, স্থানীয় বাসিন্দা, রিকশাচালক, মোটরসাইকেল আরোহীসহ সবাই একত্রিত হয়ে এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন উপভোগ করেছেন। এই শিরনি মূলত শীতকালে ধান কাটা শেষে গ্রামীণ মানুষদের একত্রিত করে এবং একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি ২০১৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, এবং সেই সময় থেকেই একে একটি পারিবারিক উদ্যোগ হিসেবে চালিয়ে আনা হয়েছে। জুনেদ আবেদীন, যিনি এই আয়োজনের উদ্যোক্তা, বলেন, “আমাদের শৈশবে এই ধরনের শিরনি আয়োজনে অংশগ্রহণ করতাম, তাই এখন এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারাটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।”
এই আয়োজনের মাধ্যমে, শুধু স্থানীয় মানুষের মধ্যে নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের মধ্যেও একটি গভীর সংযোগ তৈরি হয়। এটি প্রমাণ করে যে, মানুষ যতই ভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম ও সংস্কৃতির হোক, খাবার একটি সাধারণ ভাষা যা সকলকে একত্রিত করতে পারে।
এ ধরনের আয়োজন আমাদের সমাজের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার একটি অন্যতম উপায়, যা শুধু খাবারের মাধ্যমে নয়, বরং মানুষের হৃদয়ের গভীরে ভালোবাসা এবং সম্মানের বন্ধন তৈরি করে।