মুনসোসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি

শিশুদের অবহেলার ফলে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা

শিশুরা নানা কারণে অবহেলা ও শোষণের শিকার হয়। অনেক সময় এই অবহেলা পরিবারে অজ্ঞাত থাকে, যেমন আর্থিক সমস্যার কারণে মা-বাবা তাদের সন্তানের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন। এর ফলে শিশু খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার অভাবে পড়ে। আবার, কিছু অভিভাবক নিজেদেরও অযত্নে বড় হয়ে থাকেন, যার প্রভাব তাদের সন্তানের ওপরও পড়ে এবং তারা অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়।

১-৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি মুহূর্তে নজরদারি প্রয়োজন, কারণ তারা আগুনের সংস্পর্শ, বিষাক্ত ওষুধ, সিঁড়ি বা অন্যান্য বিপজ্জনক জায়গায় যেতে পারে। অবহেলার কারণে শিশুর এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা তার জন্য মারাত্মক হতে পারে।

অবহেলিত শিশুকে সঠিক পরিমাণে ক্যালরি ও সুষম খাদ্য দেওয়া হয় না, যার ফলে তার পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। অনেক সময় শিশুকে শুধু দুধ বা দুগ্ধজাত ফর্মুলা খাওয়ানো হয়, যার ফলে আয়রনের অভাবে শিশুটি রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে। কিছু খাবার দিয়ে পেট ভরানো হলেও, তা শিশুর প্রকৃত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় না।

অবহেলার কারণে শিশুর শরীরে অপুষ্টি সৃষ্টি হয়, যার ফলে বদহজম, শারীরিক বৃদ্ধি না হওয়া অথবা অস্বাভাবিকভাবে হালকা ওজন হতে পারে। শিশুর পোশাক অস্বাস্থ্যকর হতে পারে এবং সে এমন একটি পরিবেশে থাকে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। শীতকালে উপযুক্ত উষ্ণতার অভাবে তার বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়।

শিশুকে প্রয়োজনীয় রোগপ্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয় না, এবং অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ওষুধ সেবনেও গাফিলতি হয়।

মুনসোসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি: লক্ষণ ও প্রতিকার

‘মুনসোসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’ হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে শিশুকে অবহেলা ও নির্যাতন করা হয় সূক্ষ্মভাবে, তবে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই ক্ষেত্রে, শিশুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাই শিশুকে অত্যাচারিত করেন।

এ ধরনের অভিভাবকরা শিশুতে নানা অসুখের উপসর্গ তৈরি করেন এবং তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তারা শিশুর অসুস্থতাকে গুরুতর হিসেবে উপস্থাপন করে, যেন অন্যদের সহানুভূতি বা সাহায্য লাভ করতে পারেন। অনেক সময় তারা শিশুকে অসুস্থ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন এবং বিভিন্ন চিকিৎসা বা আর্থিক সুবিধা লাভের চেষ্টা করেন।

এ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা কঠিন, কারণ এখানে নির্দিষ্ট সময় ও স্থান সম্পর্কে কোনো সরাসরি প্রমাণ থাকে না। তবে, যদি দেখা যায়, শিশুটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অভিভাবকের উপস্থিতিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার অনুপস্থিতিতে সুস্থ থাকে, অথবা শিশুকে দেওয়া চিকিৎসা কার্যকর না হলে, তবে সন্দেহ বাড়ে যে ওই অভিভাবক মুনসোসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সির শিকার হতে পারেন।

যদি এই সন্দেহ সঠিক হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এই সন্দেহের সমাধান এবং সত্য উদঘাটন করা।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *