যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার:পেশায় ছিলেন বাদাম চাষি


গেল অক্টোবরেই শততম জন্মদিন পালন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। বয়সের সেঞ্চুরি হাকানোর পর অবশ্য বেশিদিন থাকা হলো না এই পৃথিবীতে। স্ত্রী রোজালিনকে হারানোর এক বছরের মাথায় জীবনের হিসাব চুকিয়ে তিনিও পাড়ি জমালেন অনন্তে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে জর্জিয়ার প্লেইনস শহরে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় কার্টারের।

১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র। জিমি কার্টার নামেই যার পরিচিতি। বেড়ে ওঠাও সেখানে। সাত বছর মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজের পর ১৯৫৩ সালে চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব নেন।

বাদামের খামার থেকে এক পর্যায়ে কোটিপতি হন জিমি। ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। দায়িত্ব পালন করেছেন জর্জিয়ার সিনেটর এবং গভর্নর হিসেবে। ১৯৭৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান নেতা জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেন জিমি কার্টার।

হোয়াইট হাউসের চার বছর খুব একটা মসৃণ ছিল না তার জন্য। ইরানের বিপ্লব ও তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে জিম্মি ৫২ মার্কিনীকে উদ্ধার করতে না পারাকে তার প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয়। তার আমলে বড় ধরনের মন্দার মুখে পড়ে মার্কিন অর্থনীতি।

উত্তর কোরিয়ার সাথে শান্তি মিশনের উদ্যোগ এবং ১৯৭৮ এ মিসর-ইসরায়েল ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে মধ্যস্থতায় তার ভূমিকা আজও স্মরণীয়। প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুরুত্ব দেন জলবায়ু সংকটকে। তবে একের পর এক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুর্বলতায় জিমির জনপ্রিয়তায় নামে ভাটা। তাই এক মেয়াদের বেশি টিকতে পারেননি ক্ষমতায়। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরে যান রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে।

তার হারানো ইমেজ অবশ্য অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয় পরবর্তী জীবনে মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরও কাজ করেছেন শান্তি, মানবাধিকার ও জলবায়ু নিয়ে। যার স্বীকৃতিও মিলেছে। থিওডোর রুজভেল্ট ও উড্রো উইলসনের পর তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০২ সালে পান নোবেল পুরস্কার।

ব্যক্তিজীবনে বেশ ধার্মিক ও সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন জিমি কার্টার। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময়ও বরাবর জিনস, সোয়েটারে দেখা গেছে তাকে। হোয়াইট হাউস ছেড়ে আবার ওঠেন নিজের পুরোনো জীর্ণ দুই কামড়ার ছোট বাড়িটিতেই। স্ত্রী রোজালিন, ৪ সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে ছিল পরিবার।

২০১৫ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে জিমি কার্টারের। এছাড়াও নানা জটিলতা ছিল। তবে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে প্রায় দু’বছর যাবৎ নিজ বাসভবনে নিবিড় সেবাযত্নে ছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *