পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গত দুদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই সপ্তাহে উত্তরের অঞ্চলে বেড়েছে ঘন কুয়াশার প্রকোপ, যা তীব্র শীতের অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। পৌষ মাসের শীতের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশে সর্বনিম্ন। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬-৭ কিলোমিটার। গতকাল সোমবার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন ছিল। একই দিনে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় জানান, গত দুইদিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। আকাশে হালকা মেঘ থাকলেও ঘন কুয়াশা এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারছে না। উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে শীত আরও তীব্র অনুভূত হচ্ছে। জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে তেঁতুলিয়া এলাকায় শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। রাতভর হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশা ঝরতে থাকে, যা আজ ভোরে আরও বাড়ে। দিনের শুরুতে কুয়াশা এত ঘন ছিল যে, সূর্য দেখা যাচ্ছিল না। সকাল সাড়ে ১০টায় কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠলেও, রোদের তীব্রতা ছড়াতে পারছিল না, ফলে শীত অনুভূত হচ্ছিল।
এছাড়া, গত শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে পঞ্চগড়ের ওপর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে, যার ফলে তেঁতুলিয়ায় দিনের তাপমাত্রা ৯.৩ থেকে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছিল। রবিবার হঠাৎ তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা বেড়ে ১২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়।
আজ সকালে পঞ্চগড় শহরে ভ্যানচালক জয়নাল হক (৪৫) বলেন, “আজকের শীত আগের চেয়ে অনেক বেশি, সকাল থেকে কুয়াশা এত ঘন যে কিছুই দেখা যায় না। ভ্যান চালালে হাত-পাও অবশ হয়ে যাচ্ছে।”
ঠাকুরগাঁও জেলায় তীব্র শীত ফিরে এসেছে। ঘন কুয়াশা ও হিম বাতাসের কারণে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে এবং শীতজনিত রোগের প্রকোপও বাড়ছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, বরুনাগাঁও, বাসিয়াদেবী, ইয়াকুবপুর এলাকাগুলো কুয়াশায় ঢেকে ছিল। শ্রমজীবী মানুষরা শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন, তবে কুয়াশার মধ্যে তাদের কাজের চাপ কমেনি।
ঠাকুরগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিস না থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে। আজ সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শহরের শ্রমিক হাটে সকাল ৮টায় ৩০-৪০ জন শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন। একজন শ্রমিক শচীন বর্মন (৫২) বলেন, “শীত খুব বেড়ে গেছে, কুয়াশায় ভিজে গেলাম, কিন্তু কাজ না করলে সংসার চলবে কীভাবে?”
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে ১৮১ শিশু ভর্তি রয়েছে। এর আগে, গতকাল ১৫৭ শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগেও রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, অধিকাংশ রোগী শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত।
ঠাকুরগাঁওয়ের জয়ন্তী রানী (২৬) জানান, তার মেয়ের শ্বাসকষ্ট ও সর্দিজ্বর রয়েছে, যা শীতের কারণে আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো