বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসডব্লিউপি জানিয়েছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইবার হামলার সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে যেখানে এই ধরনের হামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১০৭টি, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৩টিতে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি সাইবার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, চীনের সরকার-সমর্থিত হ্যাকাররা তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করেছে এবং গোপনীয় নথি চুরি করেছে। তবে চীন এই অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
অন্যদিকে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের অভিযোগ তুলেছে। বেইজিং দাবি করেছে, ওয়াশিংটন তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে সাইবার হানা দিয়েছে, যা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের হ্যাকাররা তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা ব্যবহার করে তাদের সিস্টেমে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা এবং এফবিআই যৌথভাবে কাজ করছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, তারা সব ধরনের সাইবার অপরাধের নিন্দা জানায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। তবে চীনও অভিযোগ তুলেছে যে, মার্কিন হ্যাকাররা তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং সাইবার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা এবং একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করা জরুরি। অন্যথায় এই সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, যা বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
বিশ্ব এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাই চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই সাইবার লড়াই শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি ঠেকাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, নতুবা ভবিষ্যতে আরও জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।