‘আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ’—এ ছড়া বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে পরিচিত। ছোট-বড় সবার প্রিয় ফল ডালিম বা বেদানা, যা আমরা জানি সুস্বাদু ফল হিসেবে। বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum এবং ইংরেজিতে পোমিগ্রানেট নামে পরিচিত। নানা অঞ্চলে এর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন হিন্দি, ফার্সি ও পশতু ভাষায় ‘আনার’, নেপালি ও সংস্কৃতে ‘দারিম’, আজারবাইজানিতে ‘নার’ এবং কুর্দি ভাষায় ‘হিনার’ বলা হয়।
ডালিমের লাল রুবি রঙের দানাগুলো সুস্বাদু তো বটেই, তা ছাড়াও অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। ইরান ও ইরাক থেকে এর বিস্তার শুরু হয়ে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে ডালিম পাওয়া যায়, যেমন তুরস্ক, সিরিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিশর ইত্যাদি।
ডালিমে রয়েছে ভিটামিন, বিউটেলিক অ্যাসিড, আরসোলিক অ্যাসিডসহ আরও বেশ কিছু উপকারী উপাদান। এসব উপাদানের কারণে ডালিম আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজি মতে, ডালিম হৃদয়ের জন্য খুবই উপকারী এবং এটি বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়।
ডালিমের উপকারিতা:
১. রক্ত বৃদ্ধি:
অনেকের মতে, ডালিম খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায় এবং এটি রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
ডালিমে প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারী ফল।
৩. রক্তপাত বন্ধ করা:
ডালিম ফুল বা পাতা কচলিয়ে রক্তপাত স্থানে লাগালে তা দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করতে ডালিম ফুলের রস শ্বাসের মাধ্যমে নিলে কার্যকর হয়।
৪. হজমে সহায়তা:
ডালিমের কাঁচা ও শুকনো খোসা আমাশয় রোগের জন্য উপকারী। খোসা সিদ্ধ করে আমাশয় রোগীরা খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫. কৃমিনাশক:
ডালিম গাছের শিকড় কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পেটের নানা সমস্যায় উপশম দেয়।
৬. জটিল রোগের উপশম:
ডালিম গাছের শিকড়, পাতা, ডাল—সবই বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ডালিমের এই অসাধারণ গুণাবলির জন্য এটি শুধু একটি ফল নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডালিম যুক্ত করা উচিত, এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে এই স্বাস্থ্যকর ফল খাওয়ানো উচিত।
ইত্তেফাক/এনএন