বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম টানা তিন দিন ধরে বেড়ে চলেছে। আজ সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলার ছাড়িয়েছে যা গত চার মাসে প্রথমবারের মতো দেখা গেল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে এই দাম বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার তেলবাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে যা চীন ও ভারতের মতো প্রধান ক্রেতা দেশগুলোর জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞদের মতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ব্যাহত হলে এই দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর আরও নির্ভরশীল হতে পারে। এর ফলে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা ও দামে বাড়তি চাপ পড়ছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১.৪৮ ডলার বেড়ে ৮১.২৪ ডলারে পৌঁছেছে। এক সময় এটি ৮১.৪৯ ডলারে উঠেছিল। একইভাবে, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ১.৫৩ ডলার বেড়ে ৭৮.১০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার গ্যাস ও তেল খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ১৮৩টি তেলবাহী জাহাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে আয়ের পথ সংকুচিত করা যা দেশটির সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও ভারত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনার দিকে ঝুঁকবে। ফলে তেলের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বৃদ্ধি পেতে পারে।
শীতকালীন সময়ে সাধারণত অপরিশোধিত তেলের চাহিদা বাড়ে যা মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ। এর সঙ্গে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব যোগ হয়ে তেলের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩৯ ডলারে উঠেছিল। ওই সময় গড় দাম ছিল ১০০ ডলারের ওপরে। তবে ২০২৩ সালে তেলের গড় দাম কিছুটা কমে ৮৩ ডলারে আসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ও শীতকালীন চাহিদা বৃদ্ধি তেলের দামকে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি তেলের দামে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও ভারত তাদের চাহিদা পূরণে নতুন উৎস খুঁজতে বাধ্য হবে যা বাজারে দামের আরও ওঠানামা তৈরি করতে পারে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের এমন অস্থিরতা কবে স্বাভাবিক হবে, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।