সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস দাবানলে বিপর্যস্ত। ভয়াবহ আগুন নেভাতে রাতদিন কাজ করছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলমান এই দুর্যোগের মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকা লাল-গোলাপি গুঁড়ায় ঢাকা পড়েছে। এই গুঁড়া কী এবং এর কার্যকারিতা কী তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে এই লাল-গোলাপি গুঁড়া আসলে অগ্নিপ্রতিরোধক পদার্থ যার নাম ফস-চেক। দাবানলের বিস্তার ঠেকাতে এটি আকাশ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও অগ্নিনিরাপত্তা বিভাগ ১৯৬৩ সাল থেকে এটি ব্যবহার করছে। ফস-চেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পেরিমিটার সলিউশন্স জানিয়েছে এটি আগুনের বিস্তার রোধে অত্যন্ত কার্যকর। সম্প্রতি হাজার হাজার গ্যালন ফস-চেক লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন এলাকায় উড়োজাহাজ থেকে ছিটানো হয়েছে।
ফস-চেক মূলত এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। এর লাল-গোলাপি রং বৈমানিকদের সঠিক স্থানে গুঁড়া ফেলতে সহায়তা করে। এটি গাছপালা ও মাটির উপরিভাগে স্তর তৈরি করে, যা দাহ্য পদার্থকে অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত রাখে। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
ফস-চেক ব্যবহারের পর এর অবশিষ্টাংশ অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে যা বাসিন্দাদের জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। পেরিমিটার সলিউশন্স পরামর্শ দিয়েছে, গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ছোট জায়গার গুঁড়া পরিষ্কার করা সম্ভব। তবে বড় এলাকা পরিষ্কারের জন্য পানির উচ্চচাপ ব্যবহার করতে হবে। সময়মতো পরিষ্কার না করলে গুঁড়া শুকিয়ে গিয়ে মাটিতে স্থায়ী দাগ ফেলতে পারে।
যদিও ফস-চেক দাবানল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর তবে এটি নিয়ে পরিবেশবাদীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে এতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ জলাশয়ে পৌঁছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতি করতে পারে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বন পরিষেবা সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ফস-চেক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে যখন মানুষের জীবন বা জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে তখন এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফস-চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তবে দ্রুত দাবানল নিয়ন্ত্রণে এটি এখনও অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি। এর সঠিক ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।