ভুয়া পাঠাগারের নামে যেত সরকারি বরাদ্দ

দেশে তালিকাভুক্ত প্রায় ১,৩০০টি বেসরকারি পাঠাগারের মধ্যে ৫৪টি পরিদর্শন করে ১৯টি ভুয়া পাঠাগার খুঁজে পেয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এসব পাঠাগারের কোথাও পাঠাগার বা বইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, শুধু সাইনবোর্ড ছিল। কিছু ক্ষেত্রে পাঠাগারের কার্যক্রম একটি ব্যক্তির বসার ঘরের তাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, এসব ভুয়া পাঠাগারের নামে বছরের পর বছর সরকারি বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তারা ৮টি জেলার ৫৪টি পাঠাগার পরিদর্শন করেন, এর মধ্যে ১৯টি পাঠাগার ভুয়া পাওয়া গেছে। এসব পাঠাগারের মধ্যে কিছু ভুয়া পাঠাগার গত অর্থবছরে বিশেষ কোটায় সরকারি অনুদান পেয়েছে, যার মধ্যে একটি পাঠাগারের অস্তিত্ব নেই, এবং অন্যটি শুধু সাইনবোর্ডে সীমাবদ্ধ।

উদাহরণ হিসেবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সিয়াম পাঠাগারটি শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড নিয়ে গত অর্থবছরে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। একইভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীর আহমদ হোছাইন গ্রন্থাগারের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি, যদিও এটি গত অর্থবছরে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিল।

আরেকটি নজির জয়পুরহাটের মালঞ্চা গণপাঠাগার, যেখানে একটি বেসরকারি সংস্থার বসার ঘরের একটি তাককেই পাঠাগার হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের সাজেদা-কাশেম গণগ্রন্থাগার ও অন্যচিত্র মডেল পাঠাগারের ক্ষেত্রে, এগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই এবং এসব পাঠাগার বিশেষ কোটায় ৮ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম জানিয়েছেন, পাঠাগার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছু দুর্বলতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে, যা তালিকাভুক্ত সব পাঠাগারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে। তিনি আরও জানান, পাঠাগারের তালিকাভুক্তির নীতিমালায় সংশোধন করা হচ্ছে।

এছাড়া, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বেসরকারি গ্রন্থাগারে অনুদান বরাদ্দ এবং বই নির্বাচন–সংক্রান্ত নীতিমালা–২০১৪’ অনুযায়ী, প্রতি বছর ২০% অনুদান মন্ত্রী ও সচিবের জন্য সংরক্ষিত থাকে, যা বিশেষ বিবেচনায় প্রদান করা হয়। গত অর্থবছরে এই ২০% কোটা থেকে ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ৩৪টি পাঠাগারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ লাখ টাকা পায় মাদারীপুরের শিবচরের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, এই অনুদান বরাদ্দের সময় সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের অভাবে অনেকে এসব ভুয়া পাঠাগারের নামে বরাদ্দ পেয়ে থাকে, এবং তারা এই বিষয়টির প্রতি সজাগ নজর রাখতে উদ্যোগী হচ্ছেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *